আসুন গান-বাজনা থেকে তাওবা করি



March 20th, 2014 by ShẮFIQUL ISLAM

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
                  
                                  بسم الله الرحمن الرحيم
প্রকৃতির ধর্ম ইসলাম মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সুস্থতার স্বার্থেই গান-বাজনাকে নিষিদ্ধ করেছেগান-বাজনা যেমন আমাদের পরকাল ভুলিয়ে দেয় তেমনি বস্তুজগতকেও দেয় ডুবিয়েএ গানের মাধ্যমেই দুর্বল নৈতিকতসম্পন্ন লোকেরা বিশেষত তরুণ প্রজন্ম অবৈধ প্রেম ও লৌকিক ভালোবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়আর এ প্রেম-ভালোবাসার প্রসাদ খেতে গিয়েই করতে বাধ্য হয় অনেক অপরাধপছন্দের মেয়েকে ভালোবাসতে না পারলে তখনই নীতিহীন ও আল্লাহভোলা ছেলেরা ঘটাতে থাকে ধর্ষণ, গুম, এসিডে মুখ ঝলসানোসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাআর তা যদি হয় পরকীয়া, তবে এরই সূত্রে ঘটে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী খুন এমনকি রাক্ষুসী মায়ের হাতে নিষ্পাপ শিশুকে পর্যন্ত হত্যার ঘটনা
অনেকের ধারণা, দুঃখের সময় গান শুনলে বেদনা লাঘব হয়আসলে গান কখনো মনের বেদনা লাঘব করে নাবরং তাকে চাগিয়ে দেয়এবং না পাওয়ার হতাশায় ভেতরে হাহাকার তোলে ভুলে যাওয়া মন্দ অতীতকে স্মরণ করে দিয়ে ব্যাথাতুর ও ভগ্ন হৃদয় বানায় যারা লৌকিক প্রেম ও ভালোবাসায় আকণ্ঠ ডুবে আছে তাদের আরও উসাহিত করে আর যারা এখনো এ জগতে পা রাখে নি, এ পথে তাদের অভিষেক ঘটায়শুধু এতটুকু হলে তাও হতোগান-বাজনার ভূমিকা এ পর্যন্ত সীমাবন্ধ নয়যারা এ গান-বাজনায় পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাদের কাছে পবিত্র কুরআনের মোহনীয় তিলাওয়াত কিংবা হৃদয়ছোঁয়া সুরে সুন্দর জীবনের প্রতি আহ্বানকারী ইসলামী সঙ্গীতও ভালো লাগে নাবিশ্বাস না হলে আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেনযারা সবসময় আমাদের সমাজটাকে রসাতলের পথে নেয়া গান-বাজনা ও মিউজিকে অভ্যস্ত তাদের সামনে ইসলামী সঙ্গীত বা কোনো বিখ্যাত কারীর তিলাওয়াত বাজিয়ে দেখুন দেখবেন এগুলো তাদের টানবে নাতাদের ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়াই সৃষ্ট করবে না। (আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন।)
দুঃখজনক সত্য হলো, আজকাল এই গান-বাজনা আমাদের সমাজকে এতো গভীরভাবে গ্রাস করেছে যে, অনেকেই জ্ঞাতে অজ্ঞাতে কুরআন ও হাদীসের নানা ফাঁক-ফোকর খোঁজার ব্যর্থ কৌশল গ্রহণ করে কিংবা মতলবী ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে সমাজবিধ্বংসী এসব গান-বাজনার বৈধতা দেবার প্রয়াস পানএদিকে যারা ইসলামের কিছুই মানতে রাজি নয় কিংবা একেবারে খোলা মন সাধারণ মুসলিম, তারা এ থেকে হন বিভ্রান্ত ও দ্বিধাগ্রস্তএমনই এক বিভ্রান্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত বোনের সন্ধান মেলে ফেসবুকেএকেবারে অজানা অদেখা এ মুসলিম বোনের পুরাতন ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো ঘেঁটে মনে হলো তিনি বড় দীন দরদীবরাবর কাতর তিনি অন্যের হেদায়েত কামনায়
একদিন তাঁর একটি স্ট্যাটাস দেখতে পেলাম ইসলামে মিউজিক বিষয়েএকটি ব্লগে পোস্ট করা প্রাচ্যবাদে প্রভাবিত এক ব্যক্তির এ বিষয়ে লেখা একটি ইংরেজি নিবন্ধ বোধ হয় তাঁকে বেশ প্রভাবিত করেছেঅনেক ইনিয়ে-বিনিয়ে এ নিবন্ধে মিউজিকের খানিকটা সাফাই গাওয়া হয়েছেবোনটি ফেসবুকে ওই লেখাটির লিংক দিয়েছেন দেখে ভাবলাম এ লেখাতো তাঁর মতো আরও অনেককেই প্রভাবিত করতে পারেইসলামে নিষিদ্ধ একটি বিষয়ে নমনীয় করতে পারে তাই তাঁকে ইসলাম হাউজে দেয়া এ সংক্রান্ত বেশ কিছু লেখার লিংক দিলামযাতে তাঁর বিভ্রান্তির ঘোর কেটে যায় এবং সবার সামনে বাস্তবতা পরিষ্কার ফুটে ওঠেআমার কমেন্টের জবাবে তিনি যা বললেন, তাতে মনে হলো ইংরেজি ওই লেখার অগভীর যুক্তিগুলো সহসা তিনি উপেক্ষা করতে পারছেন নাএটি একটি‌ কনফিউশনের বিষয় বলে তিনি ইসলাম হাউজের লেখাগুলো উপেক্ষা করতে চাইছেন বলে আমার মনে হলো
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ ٢٠ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ قَالُواْ سَمِعۡنَا وَهُمۡ لَا يَسۡمَعُونَ ٢١﴾ [الأنفال: ٢٠، ٢١]
‌‌‌সত্যি কথা বলতে কী, এ তো কোনো কনফিউশনের বিষয়ই নয়গান-বাদ্য তো কোনো অস্পষ্ট বা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন বিষয় নয়পৃথিবীর সব আলেমই গান-বাদ্যকে হারাম বলেছেনহাতে গোনা কয়েকজন এটাকে বৈধ বলতে চেয়েছেন অস্পষ্ট বা ব্যতিক্রমী কিছু প্রমাণের আলোকেতাঁদের লেখা পড়ে শুধু তারাই দ্বিধায় পড়ি, আমরা যারা এটাকে বৈধ হিসেবে দেখতে চাইআমাদের ঈমানের মজবুত ভিত গড়ে না ওঠায়ই এমনটি হচ্ছেনয়তো না ভেবেই আমরা বলে দিতে পারতাম, পৃথিবীর সব আলেম যেখানে বিষয়টিতে একমত, সেখানে দুয়েকজনের ব্যতিক্রমী বক্তব্য গ্রহণ করার তো কোনো প্রয়োজন নেইএ গেল যুক্তির কথাএবার চলুন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের কী বলেনআল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা কীআমরা কি সবার কথা গ্রহণ করবো? নাকি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের অনুসরণ করবো? মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا﴾ [النساء :59]
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদেরঅতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখএটি উত্তম এবং পরিণামে উকৃষ্টতর {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৫৯}
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ﴾ [الحشر: 7]
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর {সূরা আল-হাশর, আয়াত : ০৭}
আল্লাহ ও রাসূলের কথা শোনার পরও যদি আমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই, তা মানার ক্ষেত্রে টালবাহানা করে করি, তবে তার চেয়ে মন্দ আর কি হতে পারেআল্লাহ তাআলা ‌বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছআর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শুনে না {সূরা আল-আনফাল, আয়াত : ২০-২১}
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো আজ আমরা কালেমা পড়ি, সপ্তাহে একবার অন্তত মসজিদে গিয়েও হাজিরা দেই; কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ, বিধান ও বিচার আমাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় নাআমাদের কাছে অন্য কিছু আর ভিন্ন যুক্তিই গ্রহণযোগ্য মনে হয়! আমাদের সতর্ক হওয়ার জন্য নিচের আয়াতগুলোই তো যথেষ্ট হওয়া উচিতমহান আল্লাহ বলছেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا﴾ [النساء: 6]
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়{সূরা নিসা : ৬৫}
অন্যত্র তিনি বলেন,
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ فَكَيۡفَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةُۢ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ جَآءُوكَ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّآ إِحۡسَٰنٗا وَتَوۡفِيقًا ٦٢﴾ [النساء: ٦٠- ٦٢]
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বেতারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতেআর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতেআর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছেসুতরাং তখন কেমন হবে, যখন তাদের উপর কোন মুসীবত আসবে, সেই কারণে যা তাদের হাত পূর্বেই প্রেরণ করেছে? তারপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করা অবস্থায় তোমার কাছে আসবে যে, আমরা কল্যাণ ও সম্প্রীতি ভিন্ন অন্য কিছু চাইনি {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬০-৬২}
আল্লাহ তাআলার বিধান নিয়ে সমালোচনা করার সময় একজন মুসলিম কীভাবে ভুলে যায় যে সে আল্লাহর নির্দেশাবলির মধ্যে কোনো কিছু নির্বাচন-বর্জনের অধিকার রাখে না তার অধিকার নেই কোনোটাকে গ্রহণ আর কোনোটাকে বর্জন করারআল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا بِٱلۡأٓخِرَةِۖ فَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُمُ ٱلۡعَذَابُ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ ٨٦﴾ [البقرة: ٨٥، ٨٦]
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবেআর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে আমাদের সামনে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়, ঈমানের দাবী হলো, যুক্তির পেছনে না পড়ে কিংবা কোনো ব্যক্তি স্বার্থের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে সাড়া দেয়াআর এর দাবী হলো, কোনো দ্বিধায় না জড়িয়ে অবৈধ গান-বাজনা থেকে তাওবা করা দুনিয়ার লৌকিক আকর্ষণের মোহে না পড়ে ঈমানের চিরন্তন স্বাদ গ্রহণে সচেষ্ট হওয়াসব অজুহাত দু পায়ে ঠেলে কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যেই নিজের সুখ ও শান্তি খোঁজাগান-বাজনার অবৈধতার প্রশ্নে আসলেই কি কোনো কনফিউশন বা সংশয়ের অবকাশ আছে? না, নেইদেখুন ১৪ শতাব্দীকাল আগে এমন সব ব্যাপারে কত সুন্দর সমাধান ও নির্দেশনা আমাদের দিয়েছেন আল্লাহর হাবীব
নুমান ইবন বশীর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন,
«الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيِنِهِ وَعِرْضِهِ ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلاَ وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلاَ إِنَّ حِمَى اللهِ فِي أَرْضِهِ مَحَارِمُهُ أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ».
হালাল স্পষ্ট, হারামও স্পষ্টআর এ দুটির মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়সমূহ যা অধিকাংশ লোকই জানে নাসুতরাং যে নিজেকে সন্দেহজনক বিষয় থেকে বাঁচিয়ে চলে, সে তার দ্বীন ও সম্মানের সংরক্ষণ করেআর যে সন্দেহজনক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে, তার উদাহরণ হচ্ছে সেই রাখালের মত যে তার মেষপাল চরায় কোনো সংরক্ষিত চারণভূমির কাছাকাছি এমনভাবে যে, যে কোনো মুহূর্তে সে তাতে প্রবেশ করবে (হে লোকসকল,) সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত সীমানা আছে এবং আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত সীমানা হচ্ছে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহসাবধান! শরীরে এমন একটি মাংস পিণ্ড রয়েছে যা সুস্থ (পরিশুদ্ধ) থাকলে সারা শরীর সুস্থ থাকে, কিন্তু যদি তা কলুষিত হয়ে যায় সারা শরীর কলুষিত হয় এবং সেটি হচ্ছে হৃদয়’ [বুখারী : ৫২; মুসলিম : ৪১৭৮]
এটা কোনো গোপন বিষয় নয়এমন কিছু নয় যা অল্প কিছু মানুষ জানে কিংবা বিশেষ অধিবেশনে অথবা খাস জমায়েতে শুধু তা জানানো হয়েছেযেমন আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ وَنَحْنُ نَذْكُرُ الْفَقْرَ وَنَتَخَوَّفُهُ ، فَقَالَ : آلْفَقْرَ تَخَافُونَ ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه ، لَتُصَبَّنَّ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا صَبًّا ، حَتَّى لاَ يُزِيغَ قَلْبَ أَحَدِكُمْ إِزَاغَةً إِلاَّ هِيَهْ ، وَايْمُ اللهِ ، لَقَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى مِثْلِ الْبَيْضَاءِ ، لَيْلُهَا وَنَهَارُهَا سَوَاءٌ. قَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ : صَدَقَ وَاللَّهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ , تَرَكَنَا وَاللَّهِ عَلَى مِثْلِ الْبَيْضَاءِ ، لَيْلُهَا وَنَهَارُهَا سَوَاءٌ.
আমাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভুত হলেন, তখন আমরা দারিদ্র এবং এ নিয়ে আমাদের শংকা নিয়ে আলাপ করছিলামতিনি বললেন, ‘তোমরা দারিদ্রকে ভয় পাচ্ছো? শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের ওপর প্রবলভাবে দুনিয়াকে ঢেলে দেওয়া হবে এমনকি তোমাদের কারও অন্তর কেবল শুধু সেদিকেই ঝুঁকবেআল্লাহর শপথ, ‘আমি তোমাদের রেখে যাচ্ছি পরিষ্কার সাদা সমতলে, যার দিন তার রাত্রির মতই
আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু তা‌আলা আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই আমাদের পরিষ্কার সাদা সমতলে রেখে যান, যার দিন তার রাত্রির মতই। [ইবন মাজা : ০৬; মুসনাদ বাযযার : ৪১৪১]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا ، لاَ يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلاَّ هَالِكٌ ، فَمَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا ، فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِي ، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
আমি তোমাদের রেখে যাচ্ছি পরিষ্কার সাদা সমতলে, যার দিন তার রাত্রির মতইতা থেকে কেউ বিচ্যুত হবে না; একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অতএব আমার পরে যে বেঁচে থাকবে, অনেক বেশি মতবিরোধ দেখতে পাবেতখন তোমরা আমার সুন্নতের এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাদের আকড়ে ধরবেমাড়ির দাঁত দিয়ে তা আকড়ে থাকবে’ [ইবন মাজা : ৪৩; মুসনাদ আহমদ : ১৭১৮২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন বক্তব্য জানার পর আমি মনে করি একটি মিমাংসিত বিষয় নিয়ে দ্বিধান্বিত হবার কিছু নেইব্যতিক্রমী বক্তব্য সন্দেহমুক্ত নয়পক্ষান্তরে গান-বাদ্যের ব্যাপারে সবার বক্তব্য সুস্পষ্ট হ্যা‍, যেসব গানে অশ্লীল বক্তব্য নেই, মন্দের প্রতি আহ্বানও নেই আর অতি অবশ্যই তাতে বাদ্যও নেই- সেসব তো ইসলামে অবৈধ নয়তাই এসবের ওপর ভিত্তি করে আমাদের সমাজে প্রচলিত চরিত্র বিধ্বংসী গান-বাদ্যের সপক্ষে যাবার কোনো সুযোগ নেই
আমরা নিজেরাই একটু ভেবে দেখতে পারি, আমাদের গান শুনতে ভালো লাগে নাকি কুরআনের তিলাওয়াত? গানের প্রতি আমাদের মনোযোগ বেশি নাকি তিলাওয়াতের প্রতি? সত্যি বললে, গানের প্রতিইগান মানুষকে আল্লাহর যিকির ও তাঁর ফিকির থেকে গাফেল করে বলেই একে হারাম করা হয়েছেইরশাদ হয়েছে :
﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦ وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا وَلَّىٰ مُسۡتَكۡبِرٗا كَأَن لَّمۡ يَسۡمَعۡهَا كَأَنَّ فِيٓ أُذُنَيۡهِ وَقۡرٗاۖ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ٧﴾ [لقمان: ٦، ٧]
আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব {সূরা লুকমান, আয়াত : ০৬-০৭}
যারা মুসলিম উম্মাহর সবার ঐক্যমত্যের বাইরে গিয়ে গান-বাদ্যকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছেন, আল্লাহ তাদের মাফ করুনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে আমাদেরকে চৌদ্দশ বছর আগেই সতর্ক করেছেনতিনি বলেন,
«لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ».


আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে’ [সহীহ বুখারী : ৫৫৯০]
আশা করি এ উদ্ধৃতিগুলো অধ্যয়ন ও অনুধাবন করার পর কেউ আর গান-বাজনার পেছনে পড়বেন নাঅবৈধ গান-বাজনা আমাদের পরিহার করতেই হবেঅতীতের শোনা গানগুলোর জন্য এবং ভবিষ্যতে এ থেকে বেঁচে থাকতে তাওবা করতে হবেআল্লাহ চান তো এ কথাগুলো ফেসবুকের ওই বোনের মতো আপনাকে আমাকে কনফিউশন মুক্ত করবেআল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দীন সম্পর্কে সঠিক বুঝ দান করুনআমাদের সবাইকে অবৈধ গান-বাজনা থেকে দূরে থাকার তাওফীক দিন আমীন!


No comments:

Powered by Blogger.