★★ গোপন বদভ্যাস ছাড়ার উপায়:........:............:.........::


★প্রশ্নকর্তা: একজন লোক যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, রমজান মাসে রোজা রাখেন, আর তিনি ওমরা করেছেন এবং তিনি তাহাজ্জুদ নামাজও পড়েন। কিন্তু যখন তিনি একাকী সময় কাটান, তখন কিছু কিছু খারাপ কাজ করেন, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। আর এর পরেই তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন, এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর ৩-৪ দিন তিনি সেই খারাপ কাজগুলো করেন না, বরং ভাল কাজ করেন। এরপর, আবার খারাপ কাজ করেন, এরপর আবার ক্ষমা চান। এরকমভাবে পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। কিভাবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করা যাবে এবং তার তাকওয়া বৃদ্ধি করা যাবে।
★★ প্রিয়ভাইটির প্রশ্নের জবাব যে ভাবে দেওয়া হল ঃ------- আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, শুধুমাত্র একজনের নয়, এটি অসংখ্য মানুষের প্রশ্ন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। খুবই বিচক্ষণতাপূর্ণ প্রশ্ন, মাশাআল্লাহ। আমি এ ব্যাপারটিতে বলার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারটি নিয়ে আমি অনেক বক্তব্য দিয়েছি - পাপের আবর্তন - পুনরাবৃত্তি। এমনকি ভালো মানুষেরা যারা নামাজ পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে, আর ওমরাহ এবং অন্যান্য ইবাদত ও করে। কিন্তু একই সাথে, তারা তাদের একাকী সময়ে করা কিছু কিছু বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না।
এই সমস্যা দুই অংশে বিভক্ত। একটি হলো আধ্যাত্মিক, আরেকটি মানসিক। আর আমাদেরকে উভয় দিকেই নজর দিতে হবে। আমি মানসিক দিকটি নিয়ে শুরু করতে চাই। কারণ, বেশিরভাগ সময়ই যখন এই ধরণের আলোচনা হয়, তখন আমরা মানসিক দিকটিকে গুরুত্ব দেই না, শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক বিষয়েই কথা বলি। এ কারণে, আমি মানসিক দিকটি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
আপনাকে এটা বুঝে নিতে হবে যে, মনোবিজ্ঞানে একটা পরিভাষা হলো ট্রিগার। সহজে বলতে গেলে, নিদিষ্ট কিছু অবস্থায়, আপনার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক নিঃসরণ আপনাকে বাধ্য করে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য। এটাকে বলে ট্রিগার। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, কোন এক তরুণ এ্যাকশন মুভি দেখছে। এবং মুভির মধ্যে এক পর্যায়ে কোন সুন্দর মহিলার ছবি চোখে পড়লো। মহিলার দৃশ্যটি চোখে পড়ার সাথে সাথেই তার মনে ট্রিগার কাজ করলো - প্রতিক্রিয়া তৈরী হলো। তখনই সে মুভি প্যজ করে আরও বেশি খারাপ কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখলো। এবং এভাবে তার ভিতরে এই অভ্যাস গড়ে উঠলো। সম্পূণর্ মুভিটির জন্য এমন হয়নি, এটা হয়েছে মুভির একটা দৃশ্যের কারণে যা তার মনকে ট্রিগার করেছে। আবার এরকমও হয়, কোন কোন মানুষ, যখন তারা তাদের এ্যাপার্টমেন্ট অথবা রুমে একা থাকে, তখন আপত্তিকর কাজে জড়িয়ে পড়ে / তখন এমন বিষয় ঘটে যা খারাপ/ আপত্তিকর । যখন সে মসজিদে থাকে তখন এটা ঘটে না, যখন বন্ধুদে মাঝে থাকে তখনও এটা ঘটে না, এটা ঘটে তখন, যখন তারা একা থাকে। এ ব্যাপারে প্রথম উপদেশ হলো, আপনাকে প্রথমে এটা সনাক্ত করতে হবে যে, একাকী থাকার কোন সময়টিতে আমি পাপকাজে জড়িয়ে পড়ি ? আমি কোথায় থাকা কালীন এটা ঘটে, কোন্ নিদিষ্ট সময়ে এটা ঘটে ? আর যদি আপনি এই সমস্যা ঘটার স্থান, সময় এবং পরিস্থিতিগুলোকে সনাক্ত করতে পারেন, তখন আপনাকে এই পরিস্থিতিগুলোকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। আপনি একজন যুবক, ইন্টারনেটে যে সকল বাজে জিনিস পাওয়া যায়, তা নিয়ে যদি আপনার সমস্যা থাকে, অর্থাৎ আপনার যদি ঔ সকল বাজে জিনিস দেখার অভ্যাস থাকে, তাহলে আপনার ল্যাপটপ, মোবাইল রান্নাঘরে রাখুন। যাতে আশেপাশে আপনার মা, বাবা সবসময় চলাচল করেন। এগুলোকে আপনার রুমে রাখবেন না। আর অভিভাবকদেরকে বলছি, ঘরের মধ্যে এই জিনিসগলোকে দৃশ্যমান স্থানে রাখুন। এগুলো আমাদের সন্তানদেরকে ধবংস করে দিচ্ছে। আসলেই !
এখন আসুন এই সমস্যার আধ্যাত্মিক দিকটিতে। মানুষের জন্য এটা স্বাভাবিক যে, সে তওবা করবে এবং পুণরায় সেই পাপ করবে, কারণ আমরা খাত্তাউন। আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, খাতিউন নয়, বরং খাত্তাউন। কুল্লু বানি আদাম খাত্তাউন। আর খাত্তা হলো ছিগাতুল মুবালাগা যা দিয়ে আতিশয্য বুঝায়। সহজ ভাষায় এর অথর্ হলো, এমন ব্যক্তি যে ভুল করতেই থাকে। যেমন, খাব্বায (রুটি প্রস্তুতকারী) রুটি বানাতেই থাকে। খাত্তা বারবার ভুল করে যেতেই থাকে। এরকম ঘটতে পারে। এটা অনিবার্য যে কিছু পাপ বারবার ঘটতে পারে। কিন্তু.. কিন্তু.. কিন্তু, যদি আপনার মনের কোণে এরকম কোন চিন্তা থাকে, যে মুহূর্তে আমি তওবা করছি, ৩ সাপ্তাহ পরে তো সেই পাপটি আমি আবার করবোই। যদি আপনার মনের কোণে এই ধরণের কোন চিন্তা থাকে, তাহলে وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ….. তাওবা এ ধরণের লোকদের জন্য নয় যারা নিয়মিত খারাপ কাজ করে। সূরা নিসা ১৮।আল্লাহ বলেন - وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না। আলে ইমরান ১৩৫।
অন্যভাবে বলতে গেলে, আপনাকে একনিষ্ঠভাবে, জেনেবুঝে, মৌখিক প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আমাকে এই কাজটা বন্ধ করতে হবে। এরকম না যে, একবার আপনি কান্নাকাটি করলেন, এরপর আল্লাহর কাছে বললেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এ কাজটি আমি করেছি, আর আবার একই কাজ করেন। আপনাকে উপায় বের করতে হবে যে কিভাবে এর থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি পেতে পারেন-- নিজের সাথে ঐকান্তিক প্রতিজ্ঞা। আর আপনি যদি নিজে নিজে এটা করতে না পারেন, বন্ধু বান্ধবের সাহায্য নিন। এমন মানুষদের সাহায্য নিন যাদেরকে আপনি বিশ্বাস করেন, আমি জানি কখনো কখনো এটা বিব্রতকর। কিন্তু আমাদের সবারই মাঝে মাঝে পরামশর্ এবংসাহায্যের প্রয়োজন হয়। আপনি যখন বুঝতে পারেন যে এরকম ঘটছে বছরের পর বছর, আর আপনি এটা ত্যাগ করতেও পারছেন না, এটাই সঠিক সময় কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার। এ কারণেই বর্তমান সময়ে উম্মার জন্য মানষিক এবং আধ্যাত্মিক কাউনসেলিং অত্যন্ত প্রয়োজন। এত বেশি সংখ্যক তরুণদের কাউন্সেলিং প্রয়োজন এবং এত বেশি সংখ্যক পরিবারিক কাউন্সেলিং প্রয়োজন যে, এটাকে বলা যায় উম্মার জন্য অত্যাবশ্যকিয় বিষয়গুলোর একটি। কারণ, এটা মানুষের কাছে শান্তি পৌছে দেয়ার একটি মাধ্যম হতে পারে।

No comments:

Powered by Blogger.