স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস
কোরআন ও
হাদীসের আলোকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস |
আসুন তাকওয়ার বলে বলিয়ান হই
সংকলনে-
শফিকুল
ইসলাম তাজেরী
কামিল (হাদিস)
(এম.এ) Bmjvgx wek¦we`¨vjq, Kzwóqv
খতীব, আন্ডারচর শান্তিরহাট বাজার কেন্দ্রীয় জামে
মাসজিদ
ইমাম, রামানন্দি জামে মাসজিদ, ভূইয়া বাড়ী, ওদারহাট, চরমটুয়া,
সদর।
হোমিও কনসালটেন্ট
ডি.এইচ.এম.এস,এন.এইচ.এম.সি,বি.এইচ.বি
(ঢাকা)
মোবাইলঃ
০১৮৩১-৭৬৬ ১১২
যারা
কোরআন
বুঝে
সে
অনুঝায়ী বাস্তব জীবনে
আমল
করতে চায়
এবং
সত্যকে সত্যের
মাপকাঠি
দিয়ে মেপে নেয়
শুধু
তাদের জন্য...।
অনলাইনে
আমরাও আছি আপনার পাশে-
ইমেইলঃ shafiqulislam.tazeri@gmail.com
http://www.facebook.com/shafiqul.islam93
web: www.shafiqultutorial.blogspot.com
www.alquranerallo.blogspot.com
خطبة الجمعة الاول
ان الحمد
لله الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه - ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا
من يهده الله فلا مضل له ، ومن يضلله فلاهادي له اي فلاتجدله وليامرشدا-
ونشهد ان لااله الاالله وحده لاشريك له. وهوالذي لاجدله ولاندله لامثل له ولامثيل
له, ولاوزيرله ولاكفيل له - لاشبه له ولاشفيه له, لاولدله ولاوالدله.
وهوالواحدالفردالصمد لم يلد ولم يولد ولم يكل له كفوا احد-
ونشهد ان
سيدنا ونبينا وحبيبنا وبشيرنا ونذيرنا وطبيبنا وطبيب الواحنا وحبيبنا وحبيب ربنا
محمدا عبدالله ورسوله – ارسله بالحق بشيرا ونذيرا- وداعيا الى الله باذنه
وسراجامنيرا-
امابعد : فإن خير الحديث كتاب الله ، وخير الهدي هدي محمد صلى الله
عليه وسلم ، وشر الأمور محدثاتها ، وكل بدعة ضلالة
فقال الله تعالى :
اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَرُوْفِ وَ نَهوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.
وقَالَ تعالى : إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا
يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيہِمۡۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِمَا عَـٰهَدَ عَلَيۡهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤۡتِيهِ
أَجۡرًا عَظِيمً۬ا
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ
مَا تَرَوْنَ إِنِّي فَاعِلٌ بِكُمْ قَالُوا خَيْرًا أَخٌ كَرِيمٌ وَابْنُ أَحْ
كَرِيمٍ قَالَ فَإِنِّي أَقُولُ لَكُمْ كَمَا قَالَ يُوسُفُ لاِخْوَتِهِ لَا
تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ اذْهَبُوافَأَنْتُمُ الطَّلَقَاء
وقَالَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ
قُتِلَ دُونَ مَظْلَمَته فَهُوَ شَهِيدٌ
وقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ :وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافَنُوهُ
فَإِن لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِنُونَهُ فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ
كَافَأْتُمُوهُ
وقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :مَنْ لَمْ يَشْكُرُ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرْ الله.
নয় মাসের
সেই প্রাণ ও সম্ভ্রম হারানো দিনের পর...
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এ দেশের অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে।
মা-বোনরা সম্ভ্রম হারিয়েছে। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সেই
অগণিত মানুষের অগণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসলই হলো এই বিজয়। এ দিনটি যেন আমাদের ১৯৭১
সালের সেই দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য
দেখার জন্য। সেদিন সব ঘরবাড়ি, দালানকোঠার শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছিল স্বাধীন বাংলার
রক্ত-রঙিন পতাকা। তখন জাতির মনের একদিকে ছিল বিজয়ের আনন্দ,
অন্যদিকে ছিল নিকটজন হারানোর বেদনা।
অনেক
ত্যাগ-তিতিক্ষা আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সেদিন সব বাঙালির প্রাণে প্রাণে বেজে
উঠেছিল বিজয়ের সুর। ছড়িয়ে পড়েছিল সৃষ্টি সুখের উল্লাস। এত কষ্টার্জিত বিজয়ের দিনে
জাতি তাদের বিজয়ানন্দে আনন্দিত হবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিম
অধ্যুষিত দেশ। এ কথা আমাদের খুব ভালো করে স্মরণে রাখতে হবে। মুসলমান হিসেবে আমাদের
আইডল বা আদর্শ হলো বিশ্বমানবতার মূর্তপ্রতীক, মুক্তির দিশারি,
সফল রাষ্ট্রনায়ক,
মহান নেতা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
আমরা যা কিছু করব, নবীজির আদর্শেই করব।
প্রত্যেক
জাতিরই বিজয় আছে, আমাদের
মুসলমানেরও আছে, কিন্তু
মুসলমানের বিজয় নানা দিক থেকে আলাদা। চিন্তা ও মূল্যায়ন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্ম ও কর্মপন্থা সব দিক থেকেই মুসলমানের বিজয়
ভিন্ন মাত্রার, ভিন্ন
প্রকারের।
কুরআন মাজীদে বিজয়ের দুটো
রূপ খুব স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এক. স্বার্থ ও সাম্রাজ্যবাদী বিজয়ের রূপ আর
দুই. কল্যাণ ও আদর্শবাদী বিজয়ের রূপ।
Ø প্রথমটি
স্বার্থ ও সাম্রাজ্যবাদী বিজয়ের রূপ) বর্ণিত হয়েছে সূরা নামলের ৩৪ নম্বর আয়াতে-
اِنَّ الْمُلُوْكَ اِذَا دَخَلُوْا قَرْیَةً اَفْسَدُوْهَا وَ جَعَلُوْۤا اَعِزَّةَ اَهْلِهَاۤ اَذِلَّةً.
রাজা-বাদশা
যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তা বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার মর্যাদাবান-লোকদের
অপদস্থ করে। (২৭ : ৩৪)
কুরআন
মাজীদ ‘বিপর্যস্ত
করে’ ও ‘অপদস্থ করে’ এই দুটি মাত্র শব্দে যে বাস্তবতা বর্ণনা করেছে, যুগে যুগে রাজ্য বিস্তার ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে
সংঘটিত যুদ্ধ ও যুদ্ধজয়ের রূপটি কি তার চেয়ে কিছুমাত্রও আলাদা ছিল? এই যুদ্ধ ও যুদ্ধজয় যে কত জনপদ তছনছ করেছে! কত
মানুষের রক্ত প্রবাহিত করেছে! কত নারীর সম্ভ্রম ভূলুণ্ঠিত করেছে! কিন্তু এর
বিনিময়ে মানবতা কী পেয়েছে? প্রভু বদল ও দাসত্বের পালাবদল ছাড়া? এ কারণে বিজয়ের এই প্রকারটি মানবতার বিজয় নয়, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বিজয়।
Ø বিজয়ের দ্বিতীয়টি (কল্যাণ ও আদর্শবাদী বিজয়ের রূপ) কল্যাণ ও আদর্শবাদীরা বিজয় পেয়ে ৪টি কাজ
করে। কুরআন
বর্ণনা করেছে এভাবে-
اَلَّذِیْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِی الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَ اَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَ لِلهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ.
“আমি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা
১. সালাত আদায় করবে,
২. যাকাত দান করবে এবং
৩. সৎ কাজের আদেশ করবে ও
৪. অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। সূরা হজ্ব (২২) : ৪১ এ হচ্ছে সত্য ও আদর্শের বিজয় এবং মানব ও
মানবতার বিজয়।
ইসলাম ও নবীদের জীবনে
স্বাধীনতা ও বিজয়ঃ
মুসলিম
হিসেবে আমাদের গৌরববোধ থাকা উচিত যে, বিজয়ের এই রূপটিই আমাদের। শুধু নীতিগত দিক থেকে
নয়, বাস্তব
ইতিহাসেও এ রূপটিই আমাদের বিজয়ের রূপ। তবে হাঁ, হাজার বছরের পথচলায় কখনো যে আমাদের বিচ্যুতি
ঘটেনি তা নয়, কিন্তু
বিচ্যুতি তো বিচ্যুতিই।
আমাদের
আদর্শ ইতিহাস আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের
ইতিহাস। নবিজির
আদর্শ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِى رَسُولِ
ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٌ۬
‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর
রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১) অন্য আয়াতে আছে,
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ
ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيہِمۡۚ فَمَن نَّكَثَ
فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِمَا
عَـٰهَدَ عَلَيۡهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمً۬ا
‘যারা আপনার [মুহাম্মদ (সা.)] কাছে
আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের
হাতের ওপর রয়েছে। সুতরাং যে শপথ ভঙ্গ করে, অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আর
যে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, আল্লাহ শিগগিরই তাকে মহাপুরস্কার দান
করেন।’ (সুরা : আল-ফাতহ, আয়াত : ১০)
শুধু ফাতহে মক্কার অধ্যায়টিই দেখুন।
পুরো বিবরণ তো হাদীস ও সীরাত গ্রন্থে রয়েছে। এখানে শুধু হিজহরতের মতো কিছু টুকরো
ঘটনা তুলে ধরছি:
দেশপ্রেমিকের
সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদ (সা.)
ইসলামের প্রাণপুরুষ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন
দেশপ্রেমিকের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। বিশ্বনবীকে যখন ইসলামের শত্রুরা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল,
তখন হিজরতের সময়
বারবার জন্মভূমি মক্কার দিকে অশ্রুভরা নয়নে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন,
وَاللَّهِ إِنَّكِ لَخَيْرُ أَرْضِ اللَّهِ وَأَحَبُّ
أَرْضِ اللَّهِ إِلَى اللَّهِ وَلَوْلاَ أَنِّي أُخْرِجْتُ مِنْكِ مَا خَرَجْتُ
"
আল্লাহ্র ক্বসম! তুমি নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলার সকল ভূমির মাঝে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ্
তা’আলার নিকট
তুমিই সবচেয়ে প্রিয়ভূমি। আমাকে যদি তোমর বুক হতে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হত তবে
আমি কখনও (তোমায় ছেড়ে) চলে যেতাম না। (আবদুল্লাহ ইবনু ‘আদী ইবনু হাম্রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস: (ইবনে কাসির : ৩/৪০৪)
মহানবী (সা.)
কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির
চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, এই ওহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে,
আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি।’
(বুখারি,
হাদিস : ২/৫৩৬,
৩/১০২৮; মুসলিম, হাদিস : ২/৯৯০)
মক্কা-অভিমুখে রওনা
নবম হিজরীর
মাহে রমযানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী
মক্কা-অভিমুখে রওনা হলেন। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইতিমধ্যে ইসলাম কবুল করেছেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুসলিম বাহিনীর যাত্রাপথে
দাঁড় করিয়ে দিলেন, যেন
ইসলামের শান-শওকত তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।
একের পর এক
গোত্র অতিক্রম করে যাচ্ছে, আনসারীদের
দলটি যখন অতিক্রম করছিল, যার পতাকা
ছিল বিখ্যাত আনসারী সাহাবী সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-এর হাতে, কুরাইশের নেতা আবু সুফিয়ানকে দেখে তিনি বলে
উঠলেন,
"اليوم يوم الملحمة" “আজ
রক্তপাতের দিন।”
আবু
সুফিয়ান রা. ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের
কাছে প্রশ্ন করলে তিনি সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-কে নিষেধ করলেন এবং বললেন, اليوم يوم المرحمة"
“আজ দয়া ও
করুণার দিন।” অন্য জাতির বিজয়-দিবস
সাধারণত হয়ে থাকে ‘ইয়াওমুল
মালহামাহ’ রক্তপাত
দিবস আর মুসলিম জাতির বিজয়-দিবস হচ্ছে,
‘ইয়াওমুল মারহামাহ’ দয়া ও করুণার দিবস।
নবীজির
ভাষণ ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাঃ
মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার কাফের-মুশরিক-পৌত্তলিকরা যখন দেখলো যে, এখন আর আমাদের প্রতিরোধের কোন ক্ষমতা
নেই, তখন তারা জান বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিল কাবা ঘরের আঙ্গিনায়।
আর এরা ছিল সেসব লোক:
·
যারা নবী, সাহাবীদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল এবং যারা
নও-মুসলিমদেরকে মরুভূমির অগ্নিঝরা সূর্যের তাপের মধ্যে জ্বলন্ত বালুকার উপর শুইয়ে
দিয়ে বুকে আগুনের ছেঁক দিতো।
·
যারা বদর, ওহুদ, খন্দকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করেছিল।
·
যারা পাথর নিক্ষেপ করে রাসূলুল্লাহ সা.-এর দেহ মুবারাক রক্তাক্ত
করে তাঁর দান্দান মুবারাক শহীদ করে দিয়েছিল।
·
যারা তাঁর পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতো।
·
যারা তাঁর মাথায় সিজদারত অবস্থায় উটের ভুঁড়ি দ্বারা চাপা
দিয়ে রাখতো।
এভাবে তেরটি বছর যারা মুসলমানদেরকে কষ্ট দিয়েছে, তাদেরকে যখন হাতের নাগালে পেলেন,
তখন রহমতের নবী তাদের সাথে যে আচরণ করলেন তার নজীর পৃথিবীতে তাঁর
জন্মের আগেও কেউ স্থাপন করতে পারেনি, আর কিয়ামত পর্যন্ত কেউ
পারবেও না। হাজারো অভয়বাণী শুনানো সত্ত্বেও কাফেররা ছিল সেদিন তটস্থ। ভয়ে জড়সড়
হয়ে বসেছিল। তাদের ভাগ্যের কী ফায়সালা হয়, তা শুনবার জন্য।
রাসূলুল্লাহ সা. খানায়ে কা'বার আঙ্গিনা থেকে আগে মূর্তি অপসারিত
করলেন এবং যমযমের পানি দ্বারা তা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে তাওয়াফ করলেন। এরপর ভিতরে
ঢুকে ভিতরে পরিষ্কার করলেন এবং দু'রাকাত নামায পড়লেন। আরো
আছে, তিনি উম্মে হানির ঘরে প্রবেশ করে আট রাকাত নামাজ আদায় করেন।
এরপর তিনি কা'বা ঘরের দরজায় এসে চৌকাঠের ওপর হাত রেখে মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে এক অবিস্মরণীয়
ভাষণ দিলেন:
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ مَا تَرَوْنَ إِنِّي
فَاعِلٌ بِكُمْ قَالُوا خَيْرًا أَخٌ كَرِيمٌ وَابْنُ أَحْ كَرِيمٍ قَالَ فَإِنِّي
أَقُولُ لَكُمْ كَمَا قَالَ يُوسُفُ لاِخْوَتِهِ لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ
الْيَوْمَ اذْهَبُوافَأَنْتُمُ الطَّلَقَاء
“তোমরা কি জান, আমি তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবো?
সবাই উচ্চকন্ঠে বলে উঠলো, আপনি ক্ষমাশীল
ভাই ও দয়াদ্র ভাতিজা। ঘোষণা করলেন: আমি তোমাদেরকে তাই বলবো, যা ইউসুফ আ. তার ভাইদেরকে বলে ছিলেন- “আজ তোমাদের
প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, যাও তোমরা সবাই মুক্ত।” আল-বিদায়া-৪/৩০০-৩০১
বিজয়ীর বেশে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করছেন, তখন তাঁর সাথে ছিলেন হাজার হাজার জানবায
মুজাহিদ। যাঁদের শৌর্য-বীর্য বহু রণাঙ্গনে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর একটি মাত্র
অঙ্গুলি হেলনে এদের প্রত্যেকে প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু সেই মহান সিপাহসালারের অবস্থা এই যে, আল্লাহর প্রতি বিনয় ও শোকরগোযারীতে তাঁর শীর
মোবারক আনত । কেননা তিনি জানেন এই বিজয় আল্লাহ্ দিয়েছেন, যেমন
কোরআনের বানী-
اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِیْنًا
নিশ্চয়ই আমি
তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়..। সূরা ফাতহ (৪৮) : ১
নবী করীম সা দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন:
এবার হাবীব সমগ্র
মানুষদেরকে লক্ষ করে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন; হে লোক সকল! তোমাদের জানমাল ও ইজ্জত আবরুর উপর হস্তক্ষেপ
তোমাদের উপর হারাম করা হল। তোমাদের আজকের এই দিন, এই
(জিলহজ্জ) মাস এবং এই শহর (মক্কাশরীফ) যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, অনুরূপভাবে
উপরোক্ত জিনিসগুলোও সম্মানিত ও পবিত্র। সাবধান! আমার তোমরা পরষ্পরের হন্তা হয়ে
কাফেরদের দলভূক্ত হয়ে যেও না যেন” (বুখারী, আবু
দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)
দৃষ্টান্ত স্থাপন
অত:পর তিনি তাঁর এই নসীহত
কার্যকর করতে গিয়ে সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বলেন: “জাহিলী যুগের যাবতীয় হত্যা
রহিত হল। প্রথম যে হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ আমি রহিত করলাম তা হচ্ছে আমার বংশের রবীআ
ইবনুল হারিস এর দুগ্ধপোষ্য শিশু হত্যার প্রতিশোধ, যাকে
হুযাইল গোত্রের লোকেরা হত্যা করেছিল। আজ আমি তা ক্ষমা করে দিলাম’ ( বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ও
মুসনাদে আহমাদ)।
এরপর হারামে এসে যখন
নামাযের সময় হল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযানের জন্য
মুয়াযযিন নির্বাচন করলেন; কাকে? হযরত বেলাল
রা.-কে। তাঁকে আদেশ করলেন কাবার উপর উঠে আযান দেয়ার। হযরত বেলাল রা. হচ্ছেন একজন
হাবাশী, কালো
বর্ণের মানুষ, এবং একজন
আযাদকৃত দাস। বিশ্বাস ও কর্মহীন আভিজাত্যের অহঙ্কার চুরমার করে সকল বর্ণবাদী
জাহেলী চেতনা নস্যাৎ করে বিজয়ের দিনে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাম্য ও মানবতা।
জন্মগত আভিজাত্যের মধ্যে নয়, চেহারা ও
চামড়ার সৌন্দর্যের মধ্যেও নয়, কর্ম ও
আদর্শের মাঝেই যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এ মহাসত্য
তিনি আজ বিজয়ের দিনে প্রমাণ করেছেন।
আমাদের
স্বাধীনতা ও বিজয়ঃ
পাকিস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট। আর হিন্দুস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭
সালের ১৫ আগষ্ট। পাকিস্তান গঠিত হয় ৫টি প্রদেশ নিয়ে। আর হিন্দুস্তান গঠিত হয় ২৫টি
প্রদেশ নিয়ে। হিন্দুস্তানের প্রদেশগুলো ভৌগলিক দিক থেকে একটার সঙ্গে আরেকটা সংযুক্ত
ও মিলিত ছিল, কিন্তু পাকিস্তানের পাচঁটি প্রদেশের মধ্যে চারটি ভৌগলিকভাবে সংলগ্নতা থাকলেও
পঞ্চম প্রদেশ যেখানে আমরা বর্তমানে বসবাস করছি, পাকিস্তানের
মূল ভূখণ্ড থেকে এর দূরত্ব হলো দেড় হাজার মাইল ।
১৯৪৭ সালে পার্টিশনের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে স্থলপথে কোন সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও
শুধু মনের টানে মুসলমান পরিচয়ে জাতিভাই হিসেবে আমরা একীভূত হয়েছিলাম। পাকিস্তানী
নেতারা জনগণের সঙ্গে ওয়াদা করেছিল, আইন রচনা করা হবে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক। পূর্ব ও পশ্চিমের
দৃষ্টিতে সকলে থাকবে সমান। কিন্তু তারা তা রাখতে পারলো না।
১৯১১ সালে বৃটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করে। এই বঙ্গভঙ্গের ধারাবাহিকতাতেই পূর্ববঙ্গের
মুসলিম প্রধান বাঙালী জনগোষ্ঠী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তার ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭
সালে আমরা বৃটিষ উপনিবেশের অধীনতা থেকে স্বাধীনতা লাভ করি। পরবর্তীতে পাকিস্তানী শাসকবর্গের
শোষণ, বঞ্চনা ও জুলুমের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধের ধারায় এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের মাধ্যমে
অর্জিত ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ১৯৪৭ সালে সে স্বাধীনতার শুরু
হয়েছিল ১৯৭১ সালে সে নিয়ামত পূর্ণতা লাভ করে।
বিজয় দিবসে আমাদের করণীয় কী ও
কিভাবে হবে?
আমরা মুসলমান, বিজয় দিবস আল্লাহ্র একটা নেয়ামত। এ নিয়ামত আদায়ে আমাদের করণীয় কি হবে? এ কথা কোরান-হাদিস থেকে জেনে নেয়া
যাক; আল্লাহ্ যখন বনী ইসরাইলদের ও নবী মূসা আ. কে ফেরাউনের শোষণ ও নিপীড়ন থেকে
স্বাধীন করে বাঁচিয়ে দেন, তখনকার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ্ বলেন;
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ
وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
“এবং যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বাড়িয়ে দিব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই
আমার শাস্তি হবে কঠোর।” ইব্রাহীম-৭
নেয়ামত
আদায়ের পদ্ধতিঃ নেয়ামত আদায়ের কয়েকটি পর্যায় রয়েছে,
১. সার্বান্তকরণে এ নেয়ামত আদায় করা।
এ দান আমাদের নয়, কেবল আল্লাহ্র এ কথা বিশ্বাস ও স্বীকার
করা।
কিন্তু আমরা তা না বলে এই বিজয় নিজেদের বলে দাবি করে
থাকি। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন,
فَإِذَا مَسَ الإِنسان ضرُّ دَعَانَا ثُمَّ إِذَا
خَولْنَاهُ نِعْمَةً مِنًا قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُه على علم بل هي فتنة ولكن أكْثَرَهُمُ لا يَعْلَمُونَ
"যখন কষ্ট-দৈন্য মানুষকে স্পর্শ করে তখন সে আমাকে ডাকে।
অতঃপর যখন আমি তাকে কোনো নিয়ামত প্রদান করি তখন সে বলে, 'আমি তো তা লাভ করেছি নিজের জ্ঞানের মাধ্যমে।'
বস্তুত এ একটি পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই
তা জানে না। যুমার-৪৯
২.
হৃদয়, মন, মুখ ও দেহের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
ü
এই প্রকারে রয়েছে নামাজ আদায় করা। কেননা নবী (সা.) বিজয়ের দিন শুকরিয়াস্বরূপ আট রাকাত নামাজ
আদায় করেছিলেন। (জাদুল মা’আদ, আল্লামা ইবনুল
কাইয়িম জাওজি)
ü
শহীদদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাদের জন্য দোয়া করা। কেননা
প্রিয় নবী সা. বলেন,
مَنْ قُتِلَ دُونَ مَظْلَمَته فَهُوَ شَهِيدٌ
“যে ব্যক্তি নিজের অধিকার রক্ষা করতে নিহত হয় সে শহীদ।”
مَنْ لَمْ يَشْكُرُ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرْ الله.
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয় সে আল্লাহর প্রতিও অকৃজ্ঞ।”
وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافَنُوهُ
فَإِن لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِنُونَهُ فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ
كَافَأْتُمُوهُ
“যদি কেউ তোমাদের
কোনো উপকার করে তবে তাকে প্রতিদান দিবে । প্রতিদান দিতে না পারলে তার জন্য এমনভাবে
দুআ করবে যেন তোমরা অনুভব কর যে, তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছ।” আবু
দাউদ-২/১২৮
ü
বিজয়ের দিনে বিজয়ীদের জন্য আরো কিছু করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে
ইরশাদ হয়েছে,
إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ - وَرَأَيۡتَ
ٱلنَّاسَ يَدۡخُلُونَ فِى دِينِ ٱللَّهِ أَفۡوَاجً۬ا - فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ
رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ إِنَّهُ ۥ ڪَانَ
تَوَّابَۢا
‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়,
আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে
প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন। আর তাঁর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাকারী।’
(সুরা : আন-নাসর,
আয়াত : ১-৩)
এ আয়াত থেকে
আমরা বুঝতে পারি, বিজয় দিবসের দিন আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে—
এক. আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতার বর্ণনা করা।
দুই. যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে,
তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আর হাদিস শরিফ থেকে আমরা জানতে পারি—
তিন. আট রাকাত নামাজ আদায় করা।
চার. মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইস্তেগফার ও দোয়া করা। কোরআন পাঠসহ বিভিন্নভাবে ইসালে
সওয়াব করা।
জাগতিক উন্নতি ও বরকত লাভের ২টি বিষয় অর্জন-
কাজেই আমাদেরকে আমাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। শিক্ষা, কর্ম, সততা,
দায়িত্ববোধ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতির উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। এভাবে
আমরা আল্লাহর রহমত লাভে সক্ষম হবো। জাগতিক উন্নতি ও বরকত লাভের জন্য আল্লাহ দুটি বিষয়
অর্জনের কথা বলেছেন:
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى أَمَنُوا وَاتَّقَوْا
لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتِ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
“যদি কোনো জনপদের মানুষ ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত
তবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। সূরা ৭-আ'রাফ: ৯৬ আয়াত ৷
আমরা ইতোপূর্বে ঈমান ও বিশ্বাসের অর্থ আলোচনা করেছি। আর তাকওয়া হলো আল্লাহর
অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষার অনুভূতি। দুর্নীতি, অসততা, অবৈধ উপার্জন, মানুষের ক্ষতি, জনগণের বা রাষ্ট্রের সম্পদ অপব্যবহার
বা অপচয়, মানুষের অধিকার নষ্ট করা, অশ্লীলতা, মাদকতা ও অন্যান্য সকল হারাম কর্ম বর্জন
করা এবং সকল ফরয ইবাদত ও দয়িত্ব পালন করাই তাকওয়া। এ বিষয়ে অবহেলা যদি ব্যপকতা লাভ
করে তবে স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, বিজাতীয় শত্রুতরা জাতীয় সম্পদ
লুণ্ঠন করে এবং জাগতিক শাস্তি ও কষ্ট পাওনা হয় বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে।
অকৃতজ্ঞ হলে বা স্বাধীনতা ধরে রাখতে না পারলে কি হবে? নবীজি সা. বলেন;
لَمْ
تَظْهَرْ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بها إلا فشا فِيهِمْ الطَّاعُونُ
وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مضت في أسلافِهِمْ الَّذِينَ مَضَوْا وَلَمْ يَنْقُصُوا
الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَنُونَةِ وَجَوْرِ
السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يَمْتَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلا مُنعُوا الْقَطْرَ
مِنْ السَّمَاءِ وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ
الله وَعَهْدَ رَسُوله إلا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا من غَيْرهمْ فَأَخَذُوا
بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَنمَتُهُمْ بكتاب الله وَيَتَخَيَّرُوا
ممَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ
“যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে
যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে
এমন সব রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পুর্বপুরুষদের মধ্যে দেখা যায় নি। যখন কোনো
সম্প্রদায়ের মানুষেরা ওজনে কম বা ভেজাল দিতে থাকে, তখন তারা
দুর্ভিক্ষ, জীবনযাত্রার কাঠিন্য ও প্রশাসনের বা ক্ষমতাশীলদের
অত্যাচারের শিকার হয়। যদি কোনো সম্প্রদায়ের মানুষেরা যাকাত প্রদান না করে,
তাহলে তারা অনাবৃষ্টির শিকার হয়। যদি পশুপাখি না থাকতো তাহলে তারা
বৃষ্টি থেকে একেবারেই বঞ্চিত হতো। যখন কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের
ওয়াদা বা আল্লাহর নামে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ
তাদের কোনো বিজাতীয় শত্রুকে তাদের উপর ক্ষমতাবান করে দেন, যারা তাদের কিছু সম্পদ নিয়ে যায়। আর যদি কোনো সম্প্রদায়ের শাসকবর্গ ও
নেতাগণ আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কুরআন) অনুযায়ী বিচার শাসন না করে এবং আল্লাহর বিধানের
সঠিক ও ন্যায়ানুগ প্রয়োগের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা না করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও সংঘর্ষ বাধিয়ে দেন।”
ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদের উদাহরণ-
সম্মানিত উপস্থিতি, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে তাকে সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। স্বাধীনতা
যেন স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত না হয় । মহান আল্লাহ বলেন:
وَضَرَبَ
اللَّهُ مَثَلا قَرْيَةً كَانَتْ أمنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا
مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللهُ لبَاسَ الْجُوعِ
وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
“আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিত,
যেথায় আসত সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ, অতপর তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, ফলে তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাদেরক আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও
ভীতির আচ্ছাদনের ।”
হাযেরীন, এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, জীবন,
সম্পদ ও ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা এবং জীবনোপকরণে সহজলভ্যতা বা সচ্ছলতা
একটি স্বাধীন জনগোষ্ঠীর জন্য মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত । আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলে এর বিপরীতে ক্ষুধা, অসচ্ছলতা, ও
নিরাপত্তাহীনতার পোশাক আল্লাহ পরিধান করান। এদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। হৃদয়ের
অনুভব দিয়ে, নিয়ামতকে আল্লাহর দয়ার দান বলে বিশ্বাস করে,
স্বাধীনতা অর্জনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে,
স্বাধীনতাকে আল্লাহর নির্দেশমত পরিচালনা করে, সালাত, যাকাত, তাকওয়া
ও আইনের শাসনের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা করে আমাদেরকে এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে
হবে ও অকৃতজ্ঞতা থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে।
আসল বিজয় জান্নাতীদের
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে, দুনিয়ার জয়-পরাজয় সবই ক্ষণস্থায়ী।
আসল জয় পরকালের জয়। ইরশাদ হচ্ছে:
فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ
فَقَدْ فَازَ
“যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো
হবে, সেই হলো প্রকৃত বিজয়ী, স্থায়ী
বিজয়ী।” (সূরা ইমরান: ১৮৫)
·
যে বিজয়ের পর পরাজয় আছে, সে বিজয় বিজয় নয়।
·
যে আনন্দের পর বেদনা আছে, সে আনন্দ আনন্দ নয়।
·
যে সুখের পর অসুখ আছে, সে সুখ সুখ নয়।
·
যে স্বাধীনতার পর পরাধীনতা আছে, সে স্বাধীনতা স্বাধীনতা নয়।
·
যে নিরাপত্তার পর শঙ্কা আছে, সে নিরাপত্তা নিরাপত্তা নয়।
আর এ সবকিছুই দুনিয়ার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। একমাত্র শঙ্কামুক্ত স্বাধীনতা
ও বিজয় হলো জান্নাতীদের বিজয় । আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
لَا يَمَسُّنَا
فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوب
“সেখানে কষ্টও আমাদেরকে স্পর্শ করবে না এবং স্পর্শ করবে না
ক্লান্তি
(সূরা ফাতির: ৩৫)
তিনি আরও ইরশাদ করেন:
وَفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْأَنْفُسُ وَتَكَلُّ
الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيْهَا خَلِدُونَ
“সেখানে রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরকাল
থাকবে।” (সূরা যুখরূক: ৭১)
সুতরাং মুসলমানদের উচিত,
ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করে মৃত
ব্যক্তিদের স্মরণ করা এবং বিজয় দিবসের আনন্দ উদ্যাপন করা। এছাড়াও এ কথা প্রত্যেক
মুসলমানের হৃদয়ে গেঁথে নিতে হবে যে— স্বদেশকে ভালোবাসা,
জন্মভূমিকে ভালোবাসা নবীজির আদর্শ ও
ইমানের বহিঃপ্রকাশ। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সার্বভৌমত্ব,
আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখেন। আমাদের
স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। আমিন।
নিজ সংগ্রহে সংকলিত
গ্রন্থসমূহ |
১. তাকওয়া কোরবান ও কোরবানীর দিনের ফজিলত।
২. হাজী সাহেব আমাকে আপনার সাথে রাখুন।
৩. কোরবানীর মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন।
৪. যুগে যুগে কোরবানী ও আত্মত্যাগের
ইতিহাস।
৫. কোরবানীর গুরুত্ব এবং ফাজায়েল ও মাসায়েল।
৬. ঈদুল আযহা ও কোরবানী।
৭. ঈদুল অযহার তাৎপর্য কোরবানীর নিয়ম-কানুন এবং করণীয় ও বর্জনীয়।
৮. জীবনের হালখাতা ও মওতের মোরাকাবা ( হিজরী নববর্ষ সিরিজ-০১)
৯. হিজরী সনের গোড়াপত্তন ও আশুরার
তাত্ত্বিক পর্যালোচনা (হিজরী নববর্ষ সিরিজ- ০২)
১০. হাশরের মাঠে আল্লাহ্র রহমতের ছায়ায় যারা আশ্রয় পাবে ( রাসূল সা. এর
উপদেশাবলী সিরিজ-০১)
১১. আদর্শ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা
১২. মাসজিদ নির্মানের ফজিলত ও পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব ও
কর্তব্য।
১৩. মুসলিম জীবনে
শবে মি’রাজ ও দফা কর্মসূচী বাস্তবায়ন ।
১৪. পহেলা
বৈশাখ ও মুসলিম সংস্কৃতি
১৫. শবে
বরাত আমাদের করনীয় ও বর্জণীয়
১৬. ইসলামের স্বাস্থনীতি ও অসুস্থের প্রতি দায়ত্ব
(রমজান সিরিজ-০১)
১৭.
রজানুল মুবারকে অর্জনীয় ও করণীয় (রমজান সিরিজ-০২)
১৮. যাকাত-ফিতর ও লায়লাতুল ক্বদর (রমজান সিরিজ-০৩)
১৯. ঈদুল ফিতর (ঈদুল ফিতর- ০১, ঈদ সিরিজ-০৩)
২০. সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য ( সন্তানের অধিকার
সিরিজ-০১)
২১. নৈতিক অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের করুণ চিত্র (উত্তম চরিত্র গঠন,
সিরিজ-০১)
২২. মু’মিনদে পাঁচটি কাজের যে
পাঁচটি পুরস্কার (উত্তম চরিত্র গঠন,
সিরিজ-০২)
২৩. মৃত্যুর
পূর্ব প্রস্তুতি (পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ, সিরিজ-০১)
২৪. কোরআন ও হাদীসের আলোকে করোনা
থেকে বাঁচার উপায় (কেয়ামতের পূর্বে যা ঘটবে,সিরিজ -০১)
২৫।
আল্লাহর অবাধ্যতার কিছু নগদ শাস্তি
২৬।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত, পর্ব-০১
২৭।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত, পর্ব-০২
২৮। গৌরব গাঁথা
স্মৃতি বিজড়িত মিরাজের অবিস্মরণীয় ঘটনা ও তার শিক্ষা।
২৯।।
স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস (কর্তব্য ও বর্জনীয়)
No comments:
Post a Comment