আজানের সূচনা হ্যেছে কিভাবে _অজানা এক তথ্য জেনে নিন

যে রাতে মেরাজ সংঘটিত হয়, সে রাতেই পাঞ্জেগানা নামাজ ফরজ হয়। নামাজ ফরজ হওয়ার পর পর সাহাবায়ে কেরাম রা: নামাজ আদায় করতে শুরু করেন। ইবনে ওমর রা: বলেন, তা প্রকাশ্যে জামায়াতবদ্ধভাবে নয়। কেননা তখন মুসলমানেরা সংখ্যায় কম ছিল। মুসলমানদের শত্রু কাফের-মুশরিকরা ছিল সংখ্যায় বেশি।
রাসূলুল্লাহ সা: হিজরতের পর মদিনায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। নামাজ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে জামায়াতবদ্ধভাবে নামাজ আদায় করার প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন সাহাবিদের কেউ পরামর্শ দিলেন নামাজের সময় হলে উঁচুস্থানে আগুন জ্বালানো হোক। কেউ পরামর্শ দিলেন, ‘নাকুস’ বাজানো হোক। কেউ বললেন, ‘শিঙ্গা’ বাজানো হোক। দেখা গেল আগুন জ্বালানো অগ্নিপূজকদের কাজ, শিঙ্গা বাজায় ইহুদিরা, নাকুস বাজানো নাসারাদের কাজ। প্রথম পর্যায়ে আলোচনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো। সাহাবারা নিজ নিজ আন্দাজমতো মসজিদে উপস্থিত হতে শুরু করলেন। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলো। অতঃপর সাহাবি আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বর্ণনা করেন, ‘এক রাতে আমি নিদ্রা অবস্থায় ছিলাম। স্বপ্নে দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি আমার কাছে ঘোরাফেরা করছে, তার হাতে একটি নাকুস। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- হে আল্লাহর বান্দা। তুমি কি এ নাকুসটি বিক্রি করবে? সে আমাকে প্রশ্ন করল, আপনি এটা কী করবেন? আমি বললাম, এটা বাজিয়ে লোকদের নামাজের জন্য আহ্বান করব। সে বলল, এ কাজের জন্য আমি নাকুস বাজানো অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট একটি ব্যবস্থা শিখিয়ে দেবো কি? হ্যাঁ নিশ্চয়। আপনি উচ্চৈঃস্বরে বলবেন : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এভাবে আমাকে আজানের সমস্ত বাক্য পূর্ণরূপে শোনাল এবং তারপর একটু পরিবর্তন করে ইকামতও শিক্ষা দিলো।
সকালে নিদ্রা থেকে উঠে আমি রাসূলুল্লাহ সা:-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং আমার স্বপ্নের ঘটনা ব্যক্ত করলাম। রাসূল সা: বললেন, ইনশাআল্লাহ এটা নিশ্চয় খাঁটি সত্য স্বপ্ন। তুমি বেলালের সাথে দাঁড়িয়ে তাকে এ বাক্যগুলো শিক্ষা দেবে, সে এরূপে আজান দেবে। তখন আমি তাই করলাম। বেলাল আজান দিতে লাগলেন। এরূপে বেলাল রা: ইসলামের সর্বপ্রথম আজান ধ্বনি উচ্চারণ করেন।
এ দিকে ওমর রা: বাসস্থান থেকে দ্রুতবেগে ছুটে আসছেন এবং আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি শপথ করে বলছি, অবিকল এ স্বপ্ন আমিও দেখেছি। রাসূলুল্লাহ সা: তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন, আল্লাহ তায়ালা অতি সহজে একটি জরুরি বিষয়ে মীমাংসা করে দিয়েছেন।’ এভাবে আজান চালু হয়ে গেল এবং আজ অবধি জারি আছে, কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
ফজিলত : হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়িয়ে বহু দূর চলে যায়, যেন আজানের আওয়াজ তার কানে প্রবেশ না করে। আজান শেষ হলে লোকালয়ে আবার ফিরে আসে। যখন ইকামত বলা হয় তখনো এরূপ দৌড়িয়ে পালায়। ইকামত শেষ হলে পুনরায় এসে নামাজরত ব্যক্তিদের মনে নানা অছওয়াছা সৃষ্টি করে তাদের দিলে এদিক-সেদিক থেকে নানা কথা টেনে আনতে থাকে, যেসব কথা তাদের স্মরণেও ছিল না। এরূপে শয়তান নামাজি ব্যক্তিকে নানা কথায় ফেলে তার নামাজ ভুলিয়ে ফেলে। এমনকি কত রাকাত পড়েছে তাও স্মরণ থাকে না (বুখারি)। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষ যদি জানত আজান দেয়ার মাহাত্ম্য ও ফজিলত কী, তবে লটারি করে হলেও আজান দেয়ার সুযোগ তালাশ করত (বুখারি)। সাহাবিদের যুগে একবার এক ঘটনা ঘটেছিল, আজান দেয়ার প্রার্থী অনেক হলো, এমনকি উপস্থিত সাহাবি সায়াদ রা: তাদের মধ্যে লটারি করতে বাধ্য হলেন।
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে সওয়াবের কাজ মনে করে সাত বছর আজান দেবে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে (তিরমিজি)। মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ: তালহা ইবনে ইয়াহইয়ার পিতৃব্য থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন আমি এক সময় মুয়াবিয়া রা: ইবনে আবি সুফিয়ানের কাছে ছিলাম। মুয়াজ্জিন এসে তাকে নামাজের জন্য আহ্বান করলেন, মুয়াবিয়া রা: বললেন, আমি হুজুরে পাক সা:কে বলতে শুনেছি, রোজ কিয়ামতে মুয়াজ্জিনের গ্রিবাদেশ সর্বাপেক্ষা লম্বা হবে (মুসলিম)। আবদুর রহমান ইবনে আবু সাসা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সায়িদ রা: আমাকে বলেছেন: যখন তুমি জঙ্গলে থাকবে তখন তুমি উচ্চৈঃস্বরে আজান দেবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি; জিন-ইনসান, বৃক্ষলতা ও অচেতন পাথর যে এ আজান শুনবে, সে তার জন্য কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে (ইবনে মাজা)। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি- মুয়াজ্জিনের আজানের শব্দ যত দূর পৌঁছবে, সে দূরত্বের পরিমাণ তাকে মাফ করা হবে এবং জলস্থলের সব কিছুই তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবে (ইবনে মাজা)। ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াব লাভের আশায় সাত বছর আজান দেয় আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা লিখে দেবেন (ইবনে মাজা)। ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি ১২ বছর আজান দেয় তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়, আর প্রত্যেক আজানের বিনিময়ে তার জন্য ৬০টি নেকি লেখা হয় এবং প্রত্যেক ইকামতের জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয় (ইবনে মাজা)। যাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে বলে, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা ... ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ।’ তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে (বুখারি, আবু দাউদ)।
লেখক : প্রবন্ধকার

No comments:

Powered by Blogger.