ইরানে হামলা চালাবে ইসরাইল!

 

ইরানে হামলা চালাবে ইসরাইল!

যুদ্ধ তো মধ্যপ্রাচ্যে নিত্যসঙ্গী। তবে এবার নতুন আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে শঙ্কা জাগছে। শঙ্কা জাগানোর কাজটি করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নিজে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে বলেছেন, ইরান যাতে ইসরাইলের নির্ধারিত ‘রেডলাইন’ অতিক্রম না করে, তা যেন তিনি নিশ্চিত করেন। সিরিয়ায় স্থায়ী ও সম্প্রসারিত সামরিক উপস্থিতি রয়েছে ইরানের। কাস্পিয়ান সাগরে অবকাশযাপন কেন্দ্র সোচিতে গিয়ে পুতিনকে নেতানিয়াহু এসব বলে এসেছেন গত ২৩ আগস্ট। পুতিনকে নেতানিয়াহু আরো বলেছেন, ইরান বা হিজবুল্লাহ ইসরাইলের ‘রেডলাইন’ অতিক্রম করলে হয়তো একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
কোনো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর এটিই ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার প্রকাশ্য হুমকি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়ায় লেবাননিকরণ করতে চাচ্ছে ইরান। নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন, ইরান তার লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহর মাধ্যমে লেবাননের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে। আগামী দিনে শিয়া মিলিশিয়াদের মাধ্যমে ইরান সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণও নিতে চাচ্ছে। পুতিনকে নেতানিয়াহু বলেন, যদি এমন হয় তবে ইসরাইল ‘পরোক্ষ ভূমিকায় থাকবে না’। ইরাকের করিডোর ব্যবহার করে সিরিয়া, লেবানন যদি ইরানের সাথে লিংক হয়ে যায় আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, যদি ইরানিরা ও হিজবুল্লাহ গোলানের কাছাকাছি আসে তাহলে আমরা তা মোটেও সহ্য করব না।
সোচিতে পুতিনের সাথে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছি, সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা ব্যবহার করে ইরান ইসরাইলকে আক্রমণ করলে এটা আমরা মোটেও সহ্য কবা না।’ এ সময় সিরিয়ায় ইরানের ভূমিকা সম্পর্কে পুতিন কোনো মন্তব্য করেননি। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট শুধু মস্কোর নীতির কথাই এভাবে বলেছেন যে, ‘যুদ্ধ শেষে বিদেশী সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় থাকবে না’। কিন্তু এ সম্পর্কে তিনি কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
ইসরাইলের অভিযোগÑ ইরান ও হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যে সিরিয়ায় একটি সামরিক ঘাঁটি স্থান করে নিয়েছে সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তের কাছে কালামন পাহাড়ে। এখান থেকে ইসরাইলে মিসাইল ছোড়া বেশ সুবিধাজনক। বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সিরিয়ান-ইরাকি সীমান্তের সবটুকু নিয়ন্ত্রণ করছে। এখান দিয়েই ইরানি শিয়া মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপকে আসা-যাওয়ার রাস্তা ইতোমধ্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সিরিয়ার পক্ষ থেকে।
মজার বিষয় হলো, ইসরাইল নিজেকে সুন্নি মুসলিমদের বন্ধু ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে। সোচির বৈঠকে সুন্নি মুসলিম অঞ্চলে শিয়া উগ্রপন্থীদের বীজ বপনে নেতানিয়াহু পুতিনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। ইসরাইলিরা অবশ্য কবে অ্যাকশনে যাবে নেতানিয়াহু পুতিনকে এর সময় উল্লেখ করেননি। কিন্তু রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট জানেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সিরিয়ায় যাবে না ট্রাম্পের সম্মতি ছাড়া। রাশিয়ান নেতা স্পষ্টভাবেই পছন্দ করেন, ইসরাইল যেন ইরান বা হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে না জড়াক; যেখানে রাশিয়ার বিমান, নৌ ও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন বা মস্কো উভয়ের কাউকেই সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতিটা তার পক্ষে বোঝাতে সক্ষম হননি। ইসরাইলি মিডিয়া অথবা রাজনীতিবিদেরা এটা নেতানিয়াহুর জন্য একটি বিপজ্জনক সঙ্কেত বলেই মনে করছেন। গত ১৬ মাসের মধ্যে মস্কোতে এটি ছিল নেতানিয়াহুর চতুর্থ সফর।
চারটি সফরের সব ক’টিতেই নেতানিয়াহুর সাথে ছিলেন মোসাদ প্রধান ইউসি কোহেন ও ইসরাইলের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান মেইর বেন শাবাত। মস্কোতে নেতানিয়াহুর সফর এমন সময় হয়েছে যখন এক সপ্তাহ আগে কোহেন ওয়াশিংটন সফর করে এসেছেন। নেতানিয়াহু পুতিনকে বোঝাতে চাচ্ছেন, ‘পারমাণবিক চুক্তি হওয়ার পর ইরানের তৎপরতা একটুও কমেনি। এটি যে শুধু ইসরাইলের জন্য সমস্যা, তা নয়; এটা পুরো মধ্যপ্রাচ্য অথবা পুরো বিশ্বের জন্যই সমস্যা।’ ইসরাইল সিরিয়ায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিরোধী এই কারণে যে এ তা সিরিয়ায় ইরানের স্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। ইসরাইলি মিডিয়া জেরুসালেম পোস্টের রিপোর্ট অনুসারে ওয়াশিংটনে কোহেনের নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল সফর করে এসেছে তারা খালি হাতেই তেল আবিব ফিরেছেন। ইসরাইল ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এ নিশ্চয়তা পায়নি যে সিরিয়ায় মস্কো ও ওয়াশিংটনের যুদ্ধবিরতি ইরানি সামরিক বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মিলিশিয়ারা সিরিয়া ছেড়ে চলে যাবে।
ইসরাইলি মিডিয়া ও রাজনীতিবিদেরা এ সফরকে এভাবে মূল্যায়ন করছেন যে, যেহেতু ইসরাইল তার ঘনিষ্ঠতম মিত্র ওয়াশিংটনকে রাজি করাতে পারেনি সেহেতু নেতানিয়াহু বা তার প্রতিনিধিরা মস্কোকেও রাজি করাতে পারবে না। ইসরাইলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকুব অ্যামিডগর বলেন, ইরান যদি ইসরাইলের রেডলাইন অতিক্রম করে তাহলে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়াটি কী হবে এবং কিভাবে হবে তা রাশিয়াকে বোঝানো।
তিনি বলেন, এটা ইসরাইলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়াকে বোঝানো যে ইসরাইলের অবস্থানটি কোথায়? তিনি বলেন, রাশিয়াকে এটাও বুঝিয়ে দেয়া যে ইসরাইল ভবিষ্যতে বল প্রয়োগ করতে বাধ্য হলে রাশিয়া যেন বিস্মিত না হয়।
 প্রকৃত ব্যাপার হলো, সিরিয়া, হিজবুল্লাহ অথবা ইরান ইস্যুতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিগগিরই নাটকীয়ভাবে একটা কিছু করতে হবে। কারণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি বেশ বেকায়দায় আছেন। তার বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। এ অভিযোগ নিয়ে ইসরাইলি রাজনীতি এখন বেশ সরগরম। ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম ভক্স জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাকে শিগগিরই ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়ে আনতে পারে।
শেষ পর্যন্ত তাকে জেলেও নিয়ে যেতে পারে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ করে সাধারণ ইসরাইলিদের দৃষ্টি ইরানিদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারলে হয়তো তিনি আরো কিছু দিন টিকে যেতে পারেন। হয়তো এসব চিন্তা থেকেই ইসরাইলে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নতুন ক্ষেত্র তৈরির চিন্তা।  ( নয়াদিগন্ত....০৩.০৯.২০১৭)

No comments:

Powered by Blogger.